মুখোশের আড়ালে কে রিয়া জান্নাতের অসাধারণ উপন্যাস।

#মুখোশের_আড়ালে_কে
#রিয়া_জান্নাত 
#পর্ব_০৪

অনামিকা নিজের মোবাইলের গ্যালারিতে ঢুকে জয়ের সাথে পার্সোনাল মূহুর্ত কাটানো সময় দেখতেছিলো আর কান্না করতেছিলো। কেনো তাদের মাঝে ঝগড়া হয়েছে তার স্মৃতি চোখে ভাসছিলো 

অনামিকা, জয়,রেহেনা, বীর,তানভীর গত বছরের ১৭ আগষ্ট পাহাড়ে ঘুরতে গেছিলো। কিন্তু পাহাড়ে যেয়ে জয় ও বীর নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে। নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করার কারণে, সিলেটের জাফলংয়ের জঙ্গলে জয় অনামিকার সাথে ইন্টিমেন্ট হতে চায়। কিন্তু অনামিকা তাতে বাধা দেয়। বাধা দেওয়ার কারণে জয় অনামিকার সাথে জোড় করে। অনামিকা নিজের সম্মান রক্ষা করার জন্য জয়কে থাপ্পড় দেয়। জয় থাপ্পড় খেয়ে পশুর মতো বিহেভ করে। জয়ের চিৎকারে তানভীর ও রেহেনা ছুটে আসে। সেদিন তানভীর ও রেহেনার কারণে অনামিকা নিজেকে বাঁচাতে পারে জয়ের হাত থেকে। পরেরদিন সকালবেলা জয় অনামিকার কাছে ক্ষমা চায়। কিন্তু অনামিকা জয়কে এক শর্তে ক্ষমা করতে পারে। শর্তটা হলো জয়কে মাদকদ্রব্য ছাড়তে হবে। কিন্তু জয় তাতে রাজি ছিলো না। কারন জয় মাদকাসক্তির সাথে গভীর ভাবে জড়িত। সবকিছু ছাড়তে রাজি কিন্তু নেশা ছাড়তে রাজি নয় জয়। এভাবে যখন অনামিকা জয়কে মাদকদ্রব্য থেকে সরাতে পারছে না। তখন তানভীরকে যেয়ে থ্রেট দেয়।

" তুই যদি জয়কে কখনো নেশাজাতীয় কিছু দিস তোকে আমি পুলিশে ধরিয়ে দিবো " 
"কথাবার্তা সাবধানে বলবি অনামিকা, বন্ধু আছিস বন্ধুর মতো থাক। আমার ব্যবসায় নাক গলাতে আসবি না, তাহলে তোর সাথে আর এই নাকটি থাকবে না! "
" তুই আর যাই করিস জয় তোর বন্ধু হয়। তুই কেনো টাকার লোভে ওকে এসব ছাইপাঁশ দিস! "
" দেখ জয় বড়লোকের ছেলে, ও এসব চাইলে আমি কি করবো! 
" কথা বাড়াস না তানভীর, এবার যদি তুই জয়কে এসব দেওয়া বন্ধ না করিস ভূলে যাবো তুই কোনো সময় আমার বন্ধু ছিলি। এইটা তোর জন্য লাষ্ট ওয়ার্নিং। দুই বছর অনেক সহ্য করছি আর কিছুতেই না। এমনিতো অবৈধ ব্যবসা করিস, তার উপর আমার জয়কে নষ্ট ! "
" জয় খুকি ছেলে না, যে আমি তাকে নষ্ট করবো! আমি যদি ওকে এসব না দেই ও অন্য কারো দ্বারা এসবের ব্যবস্থা করবে। আর আমি কিছুতেই আমার কাস্টমারকে অন্যজনের হাতে তুলে দিতে পারিনা! "
" তুই আমার কথা বুঝতে পারিস নাই তানভীর। তোর জন্য অন্য রাস্তা দেখবো ওয়েট! "
" আরে যা কি করবি কর তুই, আমার বয়ে গেছে তোর কথা শোনার "!
" অনামিকা তানভীরকে ওয়ার্নিং দিয়ে জয়ের কাছে আসে। জয় তোমাকে নেশা ছাড়তে হবে নাহলে আমাকে। বলো তুমি কোনটা ছাড়বা! "
" দেখো অনামিকা, এসব ভনিতার করার জন্য আমার সাথে আবার দেখা করতে এসেছো। তোমাকে বললাম না কালকের ব্যাপার টার জন্য আমি মন থেকে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি! "
" আমার প্রশ্নের উত্তর টা পেলাম না জয়? দুইটা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে থাকা অসম্ভব। তোমাকে আজ যেকোনো একটা বেচে নিতে হবে ! "
" ওকে ফাইন! তুমি আমাকে তামিম ভাবছো তাইনা। তামিম রিপ্তিকে হারিয়ে নেশা ছাড়ছে। এখন তুমি লেগেছো আমার জীবনের পিছনে! আমি তোমার জন্য আমার এই নেশা ছাড়তে পারবো না ! "
" আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি! ভালো থাক তুই, কখনো আর আমাকে ফোন করবি না! শ্লা থাক তুই তোর নেশা নিয়ে। " 
" তুই গেলেই আমি বাঁচি। আনন্দে লাইফটা লীড করতে পারি। তুই গেলেই আমি খুশি! "
" শুন আমি চলে যাচ্ছি। আর আজকের পর থেকে মনে রাখিস তুই আমার জীবনে কালো অধ্যায় ছিলি । তোকে বন্ধু হিসাবেও মনে রাখবো না! আমার সাথে কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না। ভূল করেও আমার নম্বরে আর ফোন দিবি না। আর এই কথাও মনে রাখ অপমানিত স্থানে অনামিকা দ্বিতীয় বার ফিরেনা। "
" বড় বড় বয়ান ছেড়ে তাড়াতাড়ি যাতো। তোকে আমার সহ্য হচ্ছে না অনামিকা। "

" এরপরে অনামিকা চলে যায়! তিনদিন পর জয় অনামিকাকে বারবার ফোন দেয়। কিন্তু অনামিকা ফোন ধরেনা। অতিরিক্ত ফোন দেওয়ার কারণে অনামিকা জয়ের নম্বর মোবাইল থেকে ব্লক করে দেয়। এরপরে জয় ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার,ইনস্টাগ্রাম,ইমু সব জায়গায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু অনামিকা সোশাল সব সাইট থেকে জয়ের একাউন্ট ব্লক করে রেখে দেয়। জয় কোনো উপায় না পেয়ে ডিরেক্ট অনামিকার হোস্টেলের দরজায় নক করে। অনামিকা সেই দরজা থেকে জয়কে ফেরত পাঠায় হোস্টেলের পাহাড়াদার দ্বারা। "

এরপরে তানভীর, রেহেনা, বীর ও তামিম অনামিকার সাথে যোগাযোগ করে সাক্ষাত করার চেষ্টা চালায়। ০৪ বন্ধুর অনুরোধ ফেলতে না পেরে অনামিকা দেখা করতে যায়। কিন্তু দেখা করতে যেয়ে দেখে জয় চিপায় বসে গাঁজা খাচ্ছে। আর এই গাজার পাতা সাপ্লাই করছে তানভীর। সেদিন মিটমাটের বদলে লেগে যায় ঝগড়া । অনামিকা তানভীরকে প্রচুর গালি দেয়। আর তানভীর হয়ে কথার বলার জন্য বীর ও রেহেনাকে ভূল বুঝে অনামিকা। সেদিন অনামিকা সবার সাথে ঝগড়া করে সবার সাথে বন্ধুত্ব ভেঙে দেয়। ২০ আগষ্ট ছিলো বন্ধুত্বের শেষ দিন। সেদিনের পর থেকে কারো সাথে তেমন ভাবে কারো সঙ্গে যোগাযোগ হয় নাই। 

এরপরে জয় নিজেকে শুধরিয়ে নেয়। বারবার অনামিকার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু সম্পর্ক আগের মতো স্বাভাবিক হয় নাই আর। আজকে আর সেই জয় নেই। জয় মৃত হয়ে গেলো, অনামিকা ভাবতে থাকলো জয়কে মারলো কে?  

"এমন সময় লোডশেডিং দেখা যায় অনামিকার রুমে। অনামিকা মোবাইলের টর্চ অন করতেই দেখতে পেলো, কেউ মুখে কালো কাপড় বেধে তার রুমে ঢুকেছে।"

" অনামিকা বললো কে আপনি? কি চান এখানে। "
"তোর প্রাণ চাই। "
" আপনারতো সাহস কম না! " পুরুষ মানুষ হয়ে মেয়েদের হোস্টেলে ঢুকলেন কি করে? "
" ক্যান এর আগেও তো এসেছি! ভূলে গেছিস "
" অনামিকা কাপা কাপা গলায় বলে তু তু তুমি। কি চাও এখানে ! " 
" তোর প্রাণ চাই! তুই বেঁচে থাকলে কাল আমার পর্দাফাস হয়ে যাবে তাই তোকে মরতেই হবে অনামিকা! "
" না তুমি এমনটা করতে পারো না। "
" আমি সবকিছুই করতে পারি। বলার সাথে সাথেই লোহার দন্ড দিয়ে অনামিকার মাথায় আঘাত করে! "
" অনামিকা জোড়ে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায়।অনামিকার মাথা ফেটে রক্ত বের হয় ! "
" এবার খুনী একইভাবে অনামিকাকে খুন করে চলে যায় !"

সকাল হয়ে যায়। হোস্টেলের এক মেয়ে অনামিকার রুম পাস করতে যেয়ে দেখে, দরজার নিচ থেকে রক্ত বের হচ্ছে । রক্ত দেখে বারবার নক করে অনামিকার রুমে। অনামিকার সাড়া না পেয়ে চিৎকার করে রক্ত রক্ত বলে। বাকিসব মেয়েরা দৌড়ে আসে। সবাই দরজায় নক করে। কিন্তু কোনো সাড়া পায়না অনামিকার। রক্ত দেখে সবাই গেস করে অনামিকার কিছু হয়েছে। তাই তাদের মধ্যে কেউ একজন পুলিশকে ইনফোর্ম করে। পুলিশ এসে অনামিকার রুমের দরজা ভেঙ্গে ফেলে। ভিতরে যেয়ে দেখে অনামিকা কে কেউ হত্যা করেছে। মাসুদ দেখতে পেলো তামিম, জয়ের মতো অনামিকা কে কেউ একই সিস্টেমে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ হোস্টেলের ছাত্রীদের অনেক প্রশ্ন করলো কিন্তু কোনো উত্তর পেলো না। মাসুদ বেলালকে বললো এবার স্যারকে কি বলবো বেলাল? কালকে একে কাস্টোডিতে নিলে কোনো ক্লু পেতাম এখন কি হবে?  
আগে অনামিকার লাসটা নিয়ে যাই! পরে দেখা যাচ্ছে। 

অনামিকার লাসটা পোস্টমর্টেম করার জন্য নিয়ে যায়। মাসুদ এসে আরিয়ানকে সবটা বলে। 
" আরিয়ান বললো ওরা ০৭ জন বন্ধু। তার মধ্যে রিপ্তি,তামিম,জয়,অনামিকা শেষ। বাকি আছে তিনজন রেহেনা, বীর,তানভীর এদেরকে খুজে বের করো তুমি। এরা কোথায় আছে? এদের মধ্যে যাকেই পাবা আমার কাছে নিয়ে আসবা দ্রুত। "
"জ্বি, স্যার এই কথা বলেই মাসুদ তিনজনকে খুজতে বের হলো। 
" আরিয়ান বেলালকে বললো তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মনিরুল খান কে পুলিশ স্টেশনে আনার ব্যবস্থা করো। আমি শিউর ওনাকে ফোন করলে ওনি আসবে না। আমি ওনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই। কারণ ওনি এই কেইসে অনেক কথা চেপে গেছে। সবটা আমাদের জানতে হবে কেনো ওনি এরকম করছে। "
" জ্বি স্যার, আমি ব্যবস্থা করছি। এই বলে বেলাল এমপি মনিরুল কে পুলিশ স্টেশনে আনতে যায়। "

আরিয়ান ল্যাবে যেয়ে অনামিকার রিপোর্ট হাতে নেয়। রিপোর্টে দেখতে পায় হত্যাকারী এই খুনটাও প্রথমে মাথায় আঘাত করে বামদিকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করছে। 

চলবে,,,,,,

Post a Comment

0 Comments