অফিসে ইদানিং কাজের এত চাপ যে ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায় প্রায়ই। সেদিনও ফিরতে রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গিয়েছিল। রেল ক্রসিং এ এসে একা একা দাঁড়িয়ে আছি একটা রিকশার অপেক্ষায়।
- এই ভাই কোথায় যাবেন আপনি?
হাঁকটা শুনে পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অপরিচিত একজন একটা রিকশা নিয়ে পাশে এসে দাঁড়ালো আমার। পিছনে বসা লোকটা নিজেই জিজ্ঞেস করল
- কোথায় যাবেন, বটতলার দিকে নাকি?
আমি হ্যাঁ বলতেই লোকটি বলল," আসুন একসাথে যাই এত রাত্রে আমিও রিকশা পাচ্ছিলাম না তাই বুঝতে পারছি আপনিও কেমন বিপদে আছেন।" ওই রাতে রিকশা পেয়ে আমিও আর না করিনি। উঠে বসলাম ভদ্রলোকের পাশে। কিছুদূর গেলেই বিশাল একটা পুকুর পরে রাস্তায়। সেই পুকুরের পাশ দিয়ে রিকশা যখন যাচ্ছিল, তখন হঠাৎই পাশের লোকটা বলে উঠলো,
- ভূতে বিশ্বাস করেন আপনি?
- আরে ধুর ভাই কি যে বলেন, ভূত বলে কিছু হয় নাকি! ওগুলো তো থাকে গল্পে আর মানুষের কল্পনায়।
- ওহ, তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন, ভূত নিয়ে মানুষ যে সকল কথা বলে যেমন, ভূতের পা উল্টো হয়, ভূতের কখনো ছায়া পড়ে না, এগুলো সব মিথ্যা কথা?
- তা নয়তো কি! জীবনের অর্ধেকটা তো প্রায় পারই করে দিলাম। কই কখনো ভূত তো দেখলাম না চোখের সামনে! ভূত যদি সত্যি সত্যি থাকতো একবারও কি সেটা চোখে পড়তো না!
- আপনার সামনে ভূত এসে দাঁড়ালেই কি আপনি তাকে দেখতে পারবেন? এমন ও তো হতে পারে এই যে এখন ও আমাদের আশে পাশেই কোন ভূত আছে।
- আচ্ছা, যদি এমন থাকেই তাহলে তাকে বলুন আমার সামনে আসতে। আমি একটু দেখি তার ছায়া পড়ে কিনা!
আমার কথা শুনে লোকটা বেশ জোরে হো হো করে হেসে উঠে রিক্সাওয়ালাকে বলল মামা থামাও। খেয়াল করলাম বটতলা চলে এসেছি। উনি রিকশা থেকে নামতে নামতে রিকশাওয়ালাকে বললেন,
- যাও, ভাইকে একদম বাসার সামনে নামিয়ে দেবে, পুকুরের পেছনদিকে রাস্তাটা দিয়ে প্রথম বাড়িটা। আর তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,"ভূতের ছায়া পড়ে ভাই, এমনকি ভূতকে দেখা না গেলেও তার ছায়া ঠিকই পড়ে।"
লোকটির কথা শোনার পর রিকশাওয়ালাও আর দাঁড়ালো না। কিন্তু রিকশা এগোতে শুরু করতেই আমার হঠাৎ মনে হল, "আমার বাসা যে পুকুর পাড়ের রাস্তায় সে কথা তো ওই লোকের জানার কথা না, সে কিভাবে জানল!" একটু কৌতুহল নিয়ে রিকশার পেছনের পর্দা টা হালকা জাগিয়ে লোকটির নেমে যাওয়া জায়গার দিকে তাকালাম। কিন্তু সেই জায়গায় তাকিয়ে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলাম না, কিন্তু ঠিক লোকটার নামার জায়গাটা জুড়ে অনেকখানি জায়গা ছায়ার মতন অন্ধকার হয়েছিল তখনও। আমার সমস্ত শরীর কেমন যেন হিম হয়ে গেল। কথা বলার ভাষা পর্যন্ত যেন হারিয়ে ফেললাম। কানে যেন শুধু লোকটার বলে যাওয়ার শেষ কথাগুলো বেজে চলছিল এক নাগাড়ে। আমার ঘোর ভাংলো রিকশাওয়ালার ডাকে।
- মামা নামেন, চলে এসেছি,
আমি বাসার সামনে নেমে মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করতে করতে দেখি রিকশাওয়ালা মামা রিকশা ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি তাকে টাকাটা নেওয়ার জন্য ডাক দিতে যাব, কিন্তু ঠিক তখনই চোখ পড়ল নিচের দিকে। দেখলাম কি অদ্ভুত সুন্দর ভাবে আনমনে প্যাডেল করে যাচ্ছে রিকশাওয়ালা লোকটা, তার উল্টানো পায়ের পাতা দুটো দিয়ে...
অদ্ভুত এক রাতের গল্প
✍️: Arif Islam
0 Comments